
সকালের খবরের পাতা উল্টাতে উল্টাতে এমন অনেক ঘটনাই আমাদের চোখের সামনে ধরা পড়ে, যা রীতিমতো রোমাঞ্চকর। এসব ঘটনার কোনোটিতে আলোচনার ঝড় ওঠে বিশ্বজুড়ে, আবার কোনো ঘটনা মানুষের চোখের অগোচরেই থেকে যায়। সংবাদপত্রের পাতায় উঠে আসা এমন কয়েকটি ঘটনা নিয়ে আজকের আয়োজন।
হাওয়াইয়ের নিষিদ্ধ স্বর্গের সিঁড়ি
হাওয়াইয়ের অঞ্চলটি পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। এখানে যেমন রয়েছে বিস্তৃর্ণ সমুদ্র বেলাভূমি, তেমনই রয়েছে রহস্যময় পাহাড়। হাওয়াইয়ের অনাবিল সৌন্দর্য যেকোনো পর্যটকের কাছেই বেশ আকর্ষণীয়। এর বাইরে এই স্থানটি আরও একটি কারণে বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছে।

হাওয়াইয় দ্বীপপুঞ্জের এক রহস্যময় স্থান হাইকু উপত্যকা; Image Source: unrealhawaii.com
এই রেডিও স্টেশন নির্মাণের জন্য তারা এমন একটি স্থান বেছে নেয়, যেখানে ২০০ ফুট উচ্চতার পাশাপাশি দুটি পাহাড় রয়েছে। সেই দুই পাহাড়ের মাঝামাঝি একটি সমতল স্থানে নির্মাণ করা হয় এই রেডিও স্টেশনটি। এই রেডিও স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য নির্মাণকারী দল পর পর লোহার সিঁড়ি দিয়ে পাহাড়ের গায়ে গেঁথে দেয়। এভাবে ৩,৯২২ ধাপের সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে যেতে হয় রেডিও স্টেশনটিতে।

হাইকু উপত্যকায় অবস্থিত এই সেই নিষিদ্ধ স্বর্গের সিঁড়ি; Image Source: unrealhawaii.com
সেই সিঁড়ি দিয়ে পথ পাড়ি দেয়াও বেশ বিপজ্জনক। পাহাড়ি গাছগাছালিতে ঢাকা পড়ে রয়েছে অধিকাংশ সিঁড়ি পথ। বিশ্বের অনেক পর্যটকই রোমাঞ্চকর অভিযানের নেশায় এই পথ পাড়ি দিতে চেষ্টা করেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী বাধ্য হয়ে সর্বসাধারণের জন্য এই পথটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৭৫ সালে পথটি পর্যটকদের জন্য আবার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

বিপদসঙ্কুল হাইকু স্টেয়ার্সে ভ্রমণ করা পর্যটকদের কাছে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি; photo credit: Miguel Toralba
অদ্ভুত সেই পোস্টবেক্সে আজও চিঠি আসে
আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে মানুষ এখন ভুলেই গেছে কাগজে চিঠি লেখার কথা। একসময় আমাদের চারপাশে দেখতে পাওয়া খুবই পরিচিত পোস্টবক্সগুলো এখন শৈশবের স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে। তবে জাপানের পোস্টবক্সটি একটু ভিন্নমাত্রার। আর তাতে চিঠি ফেলা অনেকের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা।
জাপানের নিশিমুরো জেলার ওয়াকায়ামায় মাছ উৎপাদনের জন্য পরিচিত এক জনপ্রিয় শহর সুসামি। প্রায় ১৭৪.৭১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শহরটি বিস্তৃত। প্রায় পাঁচ হাজার লোকের বাস এখানে। অধিকাংশই পেশায় মৎস্যজীবী। বেশ ছিমছাম আর সুন্দর এ শহরের পরিবেশ। সমুদ্র উপকূলবতী হওয়ায় শহরের কাছেই রয়েছে দর্শনীয় সমুদ্রতট। প্রতিবছর এখানে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসেন গভীর সমুদ্রে ডাইভিংয়ের জন্য। এর বাইরে আরও একটি রোমাঞ্চকর অভিযানের নেশায় তারা ছুটে আসেন এখানে।
১৯৯৯ সালের এপ্রিলে পর্যটনের প্রসার ঘটানোর জন্য এখানকার স্থানীয় প্রশাসন সমুদ্রের তলদেশে পোস্টবক্স স্থাপনের এক অদ্ভুত পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তৎহিকো মাতসুমোতো নামের এক ৭০ বছরের পোস্টমাস্টার সমুদ্রের তলদেশে এই পোস্টবক্সের ধারণাটি পর্যটন অধিদপ্তরের কাছে প্রস্তাব করেছিলেন।

জাপানের নিশিমুরো জেলার সমুদ্র তীরবর্তী শহর সুসামির সমুদ্রের তলদেশে স্থাপিত অদ্ভুত সেই পোস্টবক্স; Image Source: tripwishlist.com
সমুদ্র সৈকত থেকে ১০ মিটার দূরে এবং প্রায় ৩২ ফুট গভীরে এই পোস্টবক্স স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু কীভাবে লোকে এই পোস্টবক্সে চিঠি ফেলবে? আর কীভাবেই সেই চিঠি সমুদ্রের পানিতে নষ্ট না হয়ে যথাযথ প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে? সে ভাবনা থেকে সিদ্ধান্ত হয়, পর্যটকরা ওয়াটারপ্রুফ কাগজে এবং ওয়াটারপ্রুফ মার্কার পেন দিয়ে চিঠি লিখে সমুদ্রের জলের নিচে গিয়ে সে পোস্টবক্সে চিঠি পোস্ট করতে পারবেন। ফলে সমুদ্রের জলে ডাইভিং করার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা আর প্রিয়জনের কাছে তার মনের ভাব প্রকাশের ইচ্ছেয় চিঠি লিখে সেই পোস্টবক্সে চিঠি ফেলে আসেন।

এই ডাকবক্সে এখনও নিয়মিত চিঠি পোস্ট করা হয়; Image Source: weibo.com
যে গ্রামে এখনও পূজিত হন হিটলার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেনি জার্মানিসহ তার আশেপাশের ইউরোপীয় দেশগুলোর জনগণ। যে মানুষটির কারণে লাখ লাখ মানুষ হলোকাস্ট নামক নির্মমতার শিকার হয়েছিল, অনেকে হয়েছিল ঘরছাড়া, দেশছাড়া, শরণার্থী হিসেবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন, তিনি আর কেউ নন, নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর দেশ থেকে হিটলারের অস্তিত্বকে চিরতরে মুছে ফেলার উদ্যোগ নেয় জার্মান সরকার। নিষিদ্ধ করে দেয়া হয় তার তৈরি নাৎসি পার্টির সকল কর্মকান্ড। নাৎসি আর্দশের নতুন কোনো দল বা নেতা যাতে তৈরি হতে না পারে সেজন্য সরকার জার্মান পার্লামেন্টে আইন প্রণয়ন করে। হিটলারের স্মৃতিকে অপ্রসাঙ্গিক করতে পরবর্তীকালে জার্মানির বিভিন্ন সরকারের নানা উদ্যোগের পরও এখনও কিছু কিছু জায়গায় রয়ে গেছে এই স্বৈরশাসকের বেশ কিছু স্মৃতিচিহ্ন।
দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির এক প্রত্যন্ত গ্রাম হার্কহিম আম বার্গ। সেখানের প্রাচীন সেন্ট জেমস প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চে আজও হিটলারের শুভকামনায় ঘন্টা বাজানো হয়। সেই ঘন্টায় উপরের দিকে চরম মমতায় খোদাই করা হিটলারের প্রতি সমর্পিত বাণী, “পিতৃভূমির জন্য সমর্পিত, অ্যাডলফ হিটলার”। আর নীচের অংশে শোভা পাচ্ছে বড় বড় করে চিত্রিত আর্যরক্তের আভিজাত্যের প্রতীক স্বস্তিকা চিহ্ন।

জার্মানির হার্কহিম আম বার্গ গ্রামের প্রাচীন সেন্ট জেমস প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ; Photo Credit: THOMAS LOHNES/GETTY images

গির্জার সেই ঐতিহাসিক ঘন্টা; Photo Credit: THOMAS LOHNES/GETTY images
জার্মানিতে হিটলারের শাসনামলে তার সমর্থনে দেশের বিভিন্ন গির্জা থেকে স্তোকবাক্য পাঠ করা হতো। পরবর্র্তীকালে তার এবং তার সরকারের পতনের পর সেই রীতি বিলুপ্ত হয়। কিন্তু আজও হার্কহিম আম বার্গ অঞ্চলের মতো জার্মানির বেশ কিছু গির্জায় বহাল তবিয়তে রয়ে গিয়েছে এমন কয়েকটি ঘণ্টা, যা অতীতের অন্ধকার দিনগুলোর কথা সবাইকে বারবার মনে করিয়ে দেয়।