ডায়েট, ব্যায়াম ও ওজন কমানো–বাড়ানো নিয়ে পাঠকদের নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ।
প্রশ্ন: আমি রক্তশূন্যতায় ভুগছি। কী কী খেলে আমি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব?
বিনোদিনি শ্রেয়শী
উত্তর: শ্রেয়সী, আপনার বয়স এবং অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা আছে কি না, তা জানাননি।
শরীরে রক্তশূন্যতা হওয়ার জন্য বিভিন্ন কারণ আছে। যেমন—
অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাবারে আয়রনের অভাবে হয়, যখন কারও শরীর পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় পরিমাণ আয়রন পায় না , তখন শরীর পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারে না, যা আমাদের লাল রক্তকণিকা তৈরির জন্য অপরিহার্য।
ভিটামিন বি-১২ ও ফলিক অ্যাসিডের অভাবেও রক্তশূন্যতা হয়।
আবার প্রতিদিনের খাবারে আমিষজাতীয় খাবারের ঘাটতি থাকলেও রক্তাস্বল্পতা বা এনিমিয়া হয়। এ ছাড়া অনেক কারণে রক্তশূন্যতা হতে পারে, আর একইভাবে তা সমাধান ও নির্ভর করে এই কারণের ওপর।
তবে সাধারণভাবে যে খাবারগুলো খেলে রক্তশূন্যতা সমাধান করা যাবে, সে বিষয়ে আমি এখানে উল্লেখ করছি।
আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন-বি-১২ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কুসুমসহ ডিম, ডাল, বিচিজাতীয় খাবার (সয়াবিন, কুমড়ার বীচি), মাছ (শিং, মাগুর, টাকি, ট্যাংরা, ছোট মাছ, শুঁটকি ইত্যাদি), মাংস, কলিজা, শাক-সবজির মধ্যে বিশেষ করে কচুশাক, লালশাক, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, বিট, ডুমুর, পেঁয়াজ, পিঁয়াজকলি, পেঁয়াজপাতা খেতে পারেন। ফলের মধ্যে খেতে পারেন জাম, আমলকী, আনার, খেজুর, তরমুজ, জাম্বুরা, কিশমিশ, পেয়ারা ইত্যাদি।
এ ছাড়া প্রতিদিন প্রোটিন/ আমিষজাতীয় খাবার (মাছ, মাংস, ডিম,ডাল ও বিভিন্ন ধরনের বিচি, দুধ) খেতে হবে।
লেবু, সবুজ মরিচ খাবারের আয়রন শোষণক্ষমতা তিন গুণ বাড়িয়ে দেয়। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার চালতা, আমড়া, জাম্বুরা, আমলকী, পেয়ারা ইত্যাদি খেলে রক্তশূন্যতা সমাধান করা যাবে।
প্রশ্ন: আমি ২৭ বছরের একজন তরুণী। ফেব্রুয়ারি মাসে আমার বিয়ে। সবাই বলছে, আমার ত্বক আগের চেয়ে রুক্ষ হয়ে গেছে। আমি কোনো রং ফরসার ক্রিম মাখতে চাই না। আমি চাই, আমার ত্বক স্বাভাবিক সময়ে যেমন, সেটাই থাকুক। ত্বকের ভেতর থেকে স্কিনের গ্লো ফিরিয়ে আনতে কোনো খাবার সাজেস্ট করবেন কি?
মারিয়া, মেহেরপুর।
উত্তর: শুধু নির্দিষ্ট কোনো অনুষ্ঠানের জন্য বা সাময়িকভাবে নয়, সারা জীবন ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে নির্দিষ্ট একটা ডায়েট মেনে চলা উচিত। নিয়ম মেনে প্রতিদিনই সুষম খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে যেগুলো খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে, সেগুলো প্রতিদিন খেতে হবে। এতে সব সময় ত্বক ভালো থাকবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে ৩ লিটার। খেতে হবে দুধ, দই, স্যুপ, ফলের রসের মতো স্বাস্থ্যসম্মত তরল খাবার; যা ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন পরিমাণমতো ভিটামিন সি (লেবুজাতীয়), ভিটামিন কে (সবুজ শাকসবজি, মাছ, ডিম, সবজি, টমেটো, ডুমুর), ভিটামিন ই (বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ তেল, বিচি ও বাদামজাতীয় খাবার, ফল ও সবজি), ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ ফল-সবজি, শাক; যা মলিন হয়ে যাওয়া ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল-সবজি খেতে হবে, যা ত্বকের কোষের নষ্ট হওয়া প্রতিরোধ করে।
ভিটামিন বি-৫ যুক্ত খাবার (দুধ, ডিম, বাঁধাকপি, মাশরুম ইত্যাদি) ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
এ ছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা ঠিক রাখতে প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম, ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য; যা একাধারে শরীর ও মনের প্রশান্তি বাড়িয়ে দেয়।
পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। কার্বনেটেড ড্রিঙ্ক, প্রসেস করা খাবার, টোবাকো, কোনো খাবারে অ্যালার্জি আক্রমণের আশঙ্কা থাকলে, সেগুলো এবং অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বাদ দিতে হবে।