দেশে শীতকাল হচ্ছে লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুম। এ মৌসুম শুরু হয়েছে নভেম্বর থেকে। যদিও এরই মধ্যে ঘাটতির শঙ্কায় সরকার এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এসব লবণ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের বাজারে প্রবেশ করছে।
এতে লবণের দাম কমে যেতে পারে। এ অবস্থায় লবণের ন্যায্য দাম না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। মিল মালিকদের দাবি, চাষিরা অপরিপক্ব লবণ মোকামে নিয়ে আসেন। ওই লবণ ক্রয় করার মতো থাকে না।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যে জানা যায়, নভেম্বর থেকে মে মাস হচ্ছে লবণ উৎপাদন মৌসুম। দেশে প্রতি মাসে লবণের চাহিদা থাকে দুই লাখ ১০ হাজার টন। ২০২৩ সালে দেশে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩৩ হাজার টন। আর ২০২২ সালে ১৮ লাখ ১৫ হাজার ১৫৬ টন।
২০২৪ সালে দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। এর মধ্যে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত দেশে লবণ উৎপাদন হয়েছে আড়াই লাখ টন।
গত ৭ নভেম্বর দেশে লবণের সংকটের শঙ্কায় সরকার ২৬৪ প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রায় ৫৫ হাজার টন লবণ দেশে এসেছে। এ ছাড়া গত ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা সাড়ে ১২ হাজার টন লবণ খালাস করেছে বিএল আবদুল্লাহ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
আমদানির বেশির ভাগ লবণ এরই মধ্যে দেশে চলে এসেছে।
লবণশিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয়। কক্সবাজারের টেকনাফ, পেকুয়া, মগনামা, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও রাজাখালী এলাকায়। ওই সব এলাকায় উৎপাদিত লবণ প্রতি বস্তা (৪৮ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা। প্রতি কেজি ২৩ থেকে ২৫ টাকা। আর অপরিশোধিত (সরাসরি মাঠ থেকে সংগ্রহ করা লবণ) লবণ প্রতি কেজি ২২ টাকা। এ ছাড়া ২৫ কেজি বক্সে সরবরাহ করা লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকা।
চট্টগ্রামে লবণের জন্য বিখ্যাত পটিয়ার ইন্দ্রপোল শিল্প এলাকা। পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে অনেক স্থানে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরবরাহ ঠিক রাখতে আর লবণের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার বাইরে থেকে লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। কিন্তু আমদানি করা লবণের একটি বড় অংশ বাজারে সরবরাহ হলেও দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
কক্সবাজার লবণ চাষি পরিষদের সভাপতি মো. মকছুদ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পর্যাপ্ত লবণ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু চাষিরা লবণ বিক্রি করতে পারছেন না। দেশের খুলনা, নারায়ণগঞ্জ মোকামে লবণ ক্রয় করছে না। এর মধ্যে আমদানি করা লবণ বাজারে চলে এসেছে। সব মিলিয়ে এবার চাষিরা লবণের সঠিক দাম পাবেন কি না সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, চাষিদের লবণ উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। এখন মাঠ পর্যায়ে প্রতি মণ লবণের দাম ৫০০ টাকা। যেভাবে উৎপাদিত লবণ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে দাম আরো কমে মণপ্রতি ৪০০ টাকায় চলে আসবে। লোকসানে পড়বেন প্রান্তিক চাষিরা।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নরুল কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, মোকামে এখন প্রতি মণ লবণ চলছে ৬০০ টাকা। আর কিছু চাষি আছেন অহেতুক অভিযোগ করেন, মোকামে লবণ নিচ্ছে না। তাঁদের অনুরোধ, কোন কোন মোকাম লবণ কিনছে না সেটার তথ্য আমাদের দিন। আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, লবণ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত রোদের প্রয়োজন। এখন সেটা খুবই কম। ফলে মাঠ পর্যায়ে লবণ উৎপাদন কম হচ্ছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ চাষি অপরিপক্ব (যে লবণ মাঠে রাখার কথা তিন দিন, সেখানে এক দিন রেখে বাজারজাত করা হচ্ছে) লবণ মোকামে নিয়ে আসছেন।
এসব লবণ অনেক মোকাম কিনতে আগ্রহ দেখায় না। তখন চাষিরা গুজব রটান, মোকামে লবণ কিনছে না। চাষিরা পরিপক্ব লবণ নিয়ে এলে দামও সঠিক দেওয়া হয়। বিসিক প্রধান কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক ও লবণ সেলের প্রধান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সারোয়ার হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে এবারের লবণ মৌসুম শুরু হয়েছে ১৫ দিন দেরিতে। এর মধ্যে দেশের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের ঘাটতি দেড় লাখ টন। এই ঘাটতি মোকাবেলায় সরকার এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়।